খৈয়াছড়া ঝর্ণা: মিরসরাইয়ের প্রকৃতির মায়া

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব ক্যানভাস। ঝর্ণার কলতান, সবুজ বন আর পাথুরে ঝিরিপথের সমন্বয়ে এই জায়গাটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে স্বপ্নের মতো। গত বর্ষায় আমার খৈয়াছড়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এখনও মনে দাগ কেটেছে। আজ আমার ব্লগে সেই রোমাঞ্চকর গল্প শেয়ার করছি।

ট্রেইলের শুরু: মিরসরাই থেকে যাত্রা

খৈয়াছড়া যেতে প্রথমে মিরসরাই উপজেলায় পৌঁছাতে হয়। ঢাকা থেকে সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুলের বাসে (ভাড়া ৪৮০-১২০০ টাকা) বা ট্রেনে চট্টগ্রাম গিয়ে মিরসরাইয়ের জন্য স্থানীয় বাস বা সিএনজি নিলাম। মিরসরাই বাজার থেকে অটোরিকশা বা জীপে (ভাড়া ২০০-৪০০ টাকা) ধলই বা খৈয়াছড়া বাজারে নেমে ট্রেইল শুরু। পাথুরে ঝিরিপথ আর ঘন বনের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির কাছাকাছি চলে আসি। আমরা একজন স্থানীয় গাইড নিয়েছিলাম (ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা), যিনি পথ চিনিয়ে দিলেন আর ঝর্ণার গল্প শোনালেন।

ঝর্ণার মুগ্ধতা: নয়টি ধাপের সৌন্দর্য

খৈয়াছড়া ঝর্ণার বিশেষত্ব এর নয়টি ধাপ, যার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু ধাপ প্রায় ১২০ ফুট। পাহাড় থেকে ঝরে পড়া জল নিচে একটি স্বচ্ছ পুকুরে জমা হয়, যেখানে আমরা সাঁতরালাম। ঝর্ণার চারপাশে ঘন বন আর পাখির কিচিরমিচির মন জয় করে। প্রথম ধাপ থেকেই জলের শীতল ছোঁয়ায় ক্লান্তি ধুয়ে যায়। আরও উপরে উঠে প্রতিটি ধাপের আলাদা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলাম। বর্ষাকালে ঝর্ণার প্রবাহ ছিল প্রবল, যেন প্রকৃতি তার পূর্ণ রূপে ধরা দিয়েছে।

কেন যাবেন খৈয়াছড়া?

খৈয়াছড়া শুধু ঝর্ণা নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাডভেঞ্চার। ট্রেইলটি ৪-৬ ঘণ্টার, তবে প্রতিটি পদক্ষেপে প্রকৃতির নতুন রূপ। ঝর্ণায় সাঁতার, ট্রেকিং, আর স্থানীয় মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ার অভিজ্ঞতা অবিস্মরণীয়। বর্ষা (জুন-সেপ্টেম্বর) ঝর্ণার জন্য আদর্শ, তবে পিচ্ছিল পথের জন্য মজবুত জুতা আর বাঁশের লাঠি নিন। শুকনো খাবার, পানি, সানস্ক্রিন, আর মশা তাড়ানোর ক্রিম সঙ্গে রাখুন। থাকার জন্য মিরসরাই বা চট্টগ্রামে হোটেল পাওয়া যায়।

খৈয়াছড়া আমাকে শিখিয়েছে, প্রকৃতির কাছে সময় কাটালে জীবনের ছোট ছোট কষ্ট ভুলে যাওয়া যায়। শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে ঝর্ণার শান্তিতে নিজেকে হারাতে চাইলে এটি আদর্শ। তবে, পরিবেশ রক্ষায় সচেতন থাকুন কোনো আবর্জনা ফেলবেন না। তুমি কবে যাচ্ছ খৈয়াছড়া? তোমার গল্প শোনাও!

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে:

  • গ্রীনলাইন, শ্যামলী, এস.আলম ইত্যাদি বাসে চট্টগ্রাম বা ফেনীগামী হয়ে “বারইয়ারহাট” নামুন।
  • সেখান থেকে সিএনজি বা অটো নিয়ে খৈয়াছড়া বাজার বা ধলই এলাকায় পৌঁছান।
  • ঝর্ণার ট্রেইল শুরু হয় এখান থেকেই।

চট্টগ্রাম থেকে:

  • চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে করে বা ট্রেনে বারইয়ারহাট বাজার পর্যন্ত যান।
  • বারইয়ারহাট থেকে স্থানীয় সিএনজি বা অটোরিকশায় খৈয়াছড়া বাজার বা ধলই পৌঁছাতে পারবেন।
  • এরপর শুরু হয় ঝর্ণার ট্রেইল। ভোরে রওনা দিলে দিনে ফিরে আসাও সম্ভব।

সিলেট থেকে:

  • ট্রেনে বা বাসে চট্টগ্রাম হয়ে একই পথে মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া গ্রামে পৌঁছানো যায়।

করণীয় ও দর্শনীয়:

  • ঝর্ণার নিচে সাঁতার কাটা
  • পাহাড়ি ট্রেকিং ও হাইকিং
  • ঘন বন ও ঝিরিপথ উপভোগ
  • স্থানীয় খাবারের স্বাদ গ্রহণ
  • উপজাতি সংস্কৃতির সাথে পরিচয়

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়:

  • বর্ষা (জুন–সেপ্টেম্বর): ঝর্ণা থাকে সর্বোচ্চ রূপে, তবে ট্রেইল পিচ্ছিল ও বিপজ্জনক।
  • শীতকাল (অক্টোবর–মার্চ): আবহাওয়া আরামদায়ক, ট্রেইল সহজতর।

থাকার ব্যবস্থা:

  • মীরসরাই: সীমিত গেস্টহাউস বা ছোট হোটেল রয়েছে।
  • চট্টগ্রাম শহর: পর্যাপ্ত হোটেল এবং রিসোর্ট পাওয়া যায়। দিনে দিনে ভ্রমণ করাও সম্ভব।
  • স্থানীয় গ্রাম: কিছু ক্ষেত্রে হোম-স্টে সুবিধা থাকতে পারে।

টিপস ও সতর্কতা:

  • আরামদায়ক ও শক্ত জুতা ব্যবহার করুন।
  • পর্যাপ্ত পানি ও শুকনো খাবার সঙ্গে নিন।
  • সানস্ক্রিন ও মশা তাড়ানোর ওষুধ নিন।
  • স্থানীয় গাইড নিলে নিরাপত্তা ও অভিজ্ঞতা—দুটোই ভালো হবে।
  • প্লাস্টিক ও আবর্জনা পরিবেশে না ফেলে পরিচ্ছন্ন রাখুন।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these