কেন মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণকারীদের জন্য একটি অবশ্যই দেখার গন্তব্য?

কক্সবাজার ভ্রমণের এটা আমাদের দ্বিতীয় দিনের পর্ব। প্রথম দিন আমরা ছিলাম মেরিন ড্রাইভ রোডে, মেরিন ড্রাইভ ইকো ক্যাম্প রিসোর্টে। আর এখন আমরা কক্সবাজার কলাতলী মোড়ের পাশে জামান হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, চেক ইন করব। যেহেতু এটা আমরা সবাই বন্ধুরা মিলে একটা ব্যাচেলর ট্যুর, তাই কম বাজেটের মধ্যে আমাদের সবার ইচ্ছে ছিল সুইমিংপুল থাকবে এরকম একটা বাজেট ফ্রেন্ডলি হোটেল। তাই একদিন আগেই আমি অনলাইনে বুকিংটা দিয়ে রাখি। পাঁচজন থাকার জন্য দুই বেডের একটা এসি রুম। আর রুমের সাথে এক ঘণ্টা সুইমিংপুলে সুইমিং করার সুযোগ। সুইমিংপুল ওপেন থাকে সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে আপনি আন্টি নিয়ে যেকোনো এক ঘণ্টা সুইমিং করতে পারবেন। হোটেল চেক ইন করতে আমাদের ১১টা বাজে। তাই দেরি না করে আজকের দিনে প্ল্যান অনুযায়ী আমরা মহেশখালী উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাই এবং একটা টমটম নিয়ে ছয় নম্বর ঘাটে পৌঁছাই।

ওখান থেকে স্পিডবোট করে আমরা মহেশখালী মন্দির ঘাটে পৌঁছাই। এখান থেকে আমাদের প্রথম গন্তব্যস্থল হলো আদিনাথ মন্দির, বাংলাদেশের বিখ্যাত অন্যতম হিন্দু মন্দির। আমরা সকলেই আদিনাথ মন্দিরে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছি এবং ঘুরাঘুরি করেছি। আদিনাথ মন্দিরে এই পর্যন্ত আমার দ্বিতীয়বার আসা। আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অনেক পবিত্র স্থান, তাই এখানে আসতে পারাটা আমাদের জন্য অনেক সৌভাগ্যের।

এবার আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল হচ্ছে বৌদ্ধ মন্দির। তাই আমরা একটা টমটম ঠিক করি আর দুইটা বৌদ্ধ মন্দির দেখার সুযোগ পাই। মহেশখালীতে অনেক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম পুরোনো ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির। অনেক সুন্দর এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।মন্দির দেখা শেষে আমরা চলে যাই ১ নম্বর জেটি ঘাটে। ওখান থেকে স্পিডবোটে করে কক্সবাজার ছয় নম্বর জেটি ঘাটে।

ফটো ক্রেডিট : Kowshick Chowdhury Rajveer 

এরপর দুপুরে খাবারটা সেরে হোটেলে পৌঁছাতে দেখি চারটা বাজে। তাই সবাই আর দেরি না করে সুইমিং করার জন্য রেডি হয়ে যায়। উপরে সুইমিংপুলে গিয়ে দেখি, সুইমিংপুলের পানির অবস্থা তেমন ভালো না। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর সবাই পানিতে নেমে যাই। ঘণ্টাখানেক থাকার পর রুমে চলে আসি আর সবাই মিলে বিশ্রাম নিই। সন্ধ্যায় বের হই আমরা চা-নাস্তা করার জন্য। আমার দোকান খুঁজতে খুঁজতে চলে যাই সুগন্ধা বিচের পাশে টংয়ের দোকানে। নাস্তা করে বিচে একটু হেঁটে আমরা চলে যাই বার্মিজ মার্কেটে কিছু কেনাকাটা করার জন্য। দীর্ঘ সময় কেনাকাটা করে এখন আবার হোটেল ফিরে আসি। কে কি কিনেছে সেগুলো একটু সবাই দেখে গুছিয়ে রাখলাম।

এবার পালা রাতের খাবারের। রাতের খাবারের জন্য আমরা কলাতলীর পাশে ভালো একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করি। খাওয়া-দাওয়া শেষে আমাদের পরের প্ল্যান হচ্ছে কলাতলী সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে সামনের দিকে যতটুকু হেঁটে যেতে পারি। রাত তখন বারোটার পর। আমরা পাঁচ বন্ধু সমুদ্র সৈকতের সুন্দর্য দেখতে দেখতে হেঁটে চলি। সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন, সমুদ্রের ঠান্ডা হাওয়া দুটোই মিলে এক অন্যরকম অনুভূতি জন্ম দেয়। মন চায় যেন রাত শেষ না হয়। আমরা বন্ধুরা মিলে এভাবে সমুদ্র সৈকতের সুন্দর্য উপভোগ করে রাতটা যেন কাটিয়ে দিতে পারি। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর আমরা সুগন্ধা বিচে গিয়ে এক ঘণ্টা বসার জন্য দুটো চেয়ার ভাড়া নিই। রাত তখন একটার পর। চেয়ারে বসে যে যার মতো সমুদ্র উপভোগ করছে, আর ছবি তুলছে, গান করছে। এসবের মাঝে কখন যে সময়গুলো কেটে গেল! সকলে ক্লান্ত হয়ে পড়ার কারণে আমরা সকলেই হোটেলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন সকাল সকাল উঠে আমরা হোটেল থেকে চেক আউট করি আর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিই।

কক্সবাজার কলাতলী থেকে মহেশখালী কিভাবে যাবেন

  1. ফিশারি ঘাট পৌঁছান:
    কলাতলী থেকে সিএনজি, টমটম বা অন্য কোনো স্থানীয় যানবাহন ব্যবহার করে কক্সবাজারের ফিশারি ঘাটে যান। এটি কক্সবাজারের প্রধান জেটি এলাকা।
  2. মহেশখালীর উদ্দেশ্যে নৌযাত্রা:
    ফিশারি ঘাট থেকে মহেশখালী যাওয়ার জন্য নৌকা বা স্পিডবোট পাওয়া যায়।
    • সাধারণ নৌকা: কম খরচে যেতে পারবেন, তবে সময় বেশি লাগবে (প্রায় ২০-৩০ মিনিট)।
    • স্পিডবোট: দ্রুত পৌঁছাতে চাইলে স্পিডবোট বেছে নিন। এতে সময় লাগবে ১০-১৫ মিনিট, তবে খরচ একটু বেশি হবে।

মহেশখালীতে ঘোরাঘুরি:

মহেশখালী পৌঁছে স্থানীয় রিকশা সিএনজি, টমটম বা অন্য কোনো যানবাহন নিয়ে দ্বীপের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান যেমন আধিনাথ মন্দির, ম্যানগ্রোভ বন বা লবণ চাষের স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these