কক্সবাজার এমন একটা জায়গা, যতবারই যান পরের বার আবার যেতে ইচ্ছে করে। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও আমি কক্সবাজার ট্যুর প্ল্যান করি। প্রথমে আমরা দুইজন যাবার সিদ্ধান্ত নিই। পরে আমাদের আরও দুই বন্ধু যাওয়ার প্ল্যান হয়। মোট আমরা চারজন কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হই। খুব ভোরবেলা আমরা নতুন চান্দগাঁও বাস স্টেশনে চলে যাই। কোরবানির ঈদের দুইদিন আগে কক্সবাজার যাচ্ছি তাই বাস স্টেশনে সকাল থেকে অনেক যাত্রী ছিল। আমি কয়েকটা কাউন্টার ঘুরে পরে পূরবীর কাউন্টার থেকে বাসের টিকিট নিয়ে নিই। বাস ছাড়ার সময় সকাল ৬:৪০ থাকলেও বাস ছেড়ে যেতে ৭টার পর হয়। কিন্তু সকালবেলা রাস্তা খালি থাকার কারণে আমরা ১০:২০ মধ্যেই কক্সবাজার ডলফিন মোড়ে পৌঁছাই।
আমরা একটা নাস্তার দোকানে গিয়ে সবাই মিলে সকালের নাস্তা করে ফেলি। যেহেতু আমরা বন্ধুরা ট্যুরে এসেছি তাই বাজেটের কথা চিন্তা করে আমরা আগে থেকে একটা হোটেল দেখে রেখেছিলাম, মেরিন ড্রাইভ রোডে, ডলফিন মোড় থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। মেরিন ড্রাইভ রোডে মেরিন ড্রাইভ ইকো ক্যাম্প বাজেটের মধ্যে অনেক ভালো একটা কটেজ এবং ক্যাম্পিং সাইট। এখানে আপনি থাকার জন্য ২০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যেই ভালো থাকার ব্যবস্থা আছে। তিন বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে যোগ করতে হবে রুম ভাড়ার সাথে। মেরিন ড্রাইভে থাকার উদ্দেশ্যই হলো কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি, শান্ত এবং প্রকৃতির মাঝে ভালো একটা দিন কাটানো। তাই বাজেটের মধ্যেই এটাই সেরা রিসোর্ট।
প্রথমেই আমরা দেড় হাজার টাকা দিয়ে একদিনের জন্য চারজনের থাকার মতো একটা রুম নিয়ে নিই। রুমে গিয়ে সকলেই আমরা সাথে সাথে ড্রেস পাল্টে সমুদ্রে পাড়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হই। রিসোর্ট থেকে সমুদ্রের পাড়ে যাওয়ার জন্য ৮ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে। আর সমুদ্রের পাড়ে গিয়েই মনে হবে যেন এটা আপনার নিজস্ব প্রাইভেট বিচ। তেমন কোনো লোকজনের আনাগোনা নেই। দূরে কিছু স্থানীয় লোক মাছ ধরছে, এটাই দেখা যাবে। এই সুযোগ নিয়ে আমরা চার বন্ধু মিলে ঘন্টাখানেক শুধু পানির মধ্যে বসে ছিলাম। সমুদ্রের ঢেউ যখন আসে, আমাদের শরীরের উপর দিয়ে যখন যায়, আর ঢেউয়ের সাথে আমরা যখন গা ভাসিয়ে দেই, ছোটবেলায় বালি নিয়ে খেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। তখন মনে হচ্ছিল আমি যেন পানি আর বালি নিয়ে খেলা করছি। সবার গায়ে, প্যান্টের পকেটে, সব বালু দিয়ে ভরা। দুপুর হওয়াতেই আমরা সবাই চলে আসি আর ফ্রেশ হইনি। এরপর দুপুরের খাবারের পালা। দুপুরের খাবারটা আমরা খেয়েছিলাম রিসোর্টের ওয়াচ টাওয়ারে। অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ। দুপুরের খাবার খেয়ে শেষ করলাম।


খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম করে নিলাম। এরপর বিকেল পাঁচটায় বেরিয়ে পড়লাম ইনানি বিচ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। একটা অটো ভাড়া করে নিলাম ইনানি বিচসহ আর কয়েকটা জায়গা দেখার জন্য। গাড়ি থেকে সমুদ্র উপভোগ করার অন্যতম জায়গা হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ রোড। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে আপনি সমুদ্রের আর পাহাড়, এই দুটোরই স্বাদ একসাথে পাবেন। আমরা ইনানি আর পাটোয়ারটেক বিচ ঘুরে আবার চলে আসি।


সন্ধ্যায় রিসোর্টে এসেই আমরা সন্ধ্যায় নাস্তার জন্য ঝালমুড়ি তৈরি করি। সবাই মিলে নিজেরা করে খাওয়াতে একটা আলাদা আনন্দ আছে। এরপরে আমরা সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া শুরু করি। এর মধ্যে আমাদের আরেকজন বন্ধু চট্টগ্রাম থেকে আসার কথা এবং সে হুট করে প্ল্যান করে আমাদের সাথে এসে জয়েন করবে যে কথা সেই কাজ। চট্টগ্রাম থেকে রাত ৯:৩০ গাড়িতে উঠে। এদিকে আমরা তার জন্য রাতের খাবার অর্ডার দিয়ে রাখি আর তার থাকার ব্যবস্থা করি। আর চিন্তা করছি যে এত রাতে সে আসবে কখন, এসে পৌঁছাবে কখন। তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে দুই বন্ধু ঘুমিয়ে গেছে। আর আমরা দুজন মিলে তার জন্য অপেক্ষা করছি আর দাবা খেলছি। শেষে পৌঁছাতে রাত দুটো হয়ে গেল। আমরা তাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললাম আর তার খাবারটা পরিবেশন করে দিলাম।
পরের দিন সকালে আমাদের রিসোর্ট থেকে চেক আউট করার পালা। সকাল ৯টায় আমরা সকালের ব্রেকফাস্টটা সেরে নিলাম আর কিছুক্ষণ সবাই মিলে সুন্দর সকালটাকে উপভোগ করলাম। ব্যস্ততার মাঝে কখন জানি সময় হয়, এরকম সমুদ্রের পাশে সুন্দর একটা সময় কাটানো! সবাই সবকিছু গুছিয়ে আমরা মেরিন ড্রাইভ থেকে কক্সবাজার, কলাতলী উদ্দেশ্যে রওনা হই।
গ্রামীণ পরিবেশের স্বাদ নিতে আগ্রহী ভ্রমণপিপাসুদের জন্য Marine Drive Eco Camp একটি আদর্শ স্থান।
মেরিন ড্রাইভ ইকো ক্যাম্পে থাকার কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা:
সুবিধা:
১. সার্বক্ষণিক ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা আছে।
২. তিন বেলা খাবারের জন্য সেট মেনু আছে।
৩. সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশ।
অসুবিধা:
১. কক্সবাজার শহর থেকে দূরে হওয়ায় এখানে সবকিছু পাওয়া যায় না।
২. আপনার পছন্দমতো কিছু খেতে চাইলে তাদেরকে জানাতে হবে এবং অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে।
কক্সবাজারে যাওয়ার উপায়
আকাশপথে: ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে নিয়মিত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু রয়েছে। সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা।
বাসে: ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহর থেকে কক্সবাজারগামী বিলাসবহুল ও সাধারণ বাস সার্ভিস পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বাসে যেতে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা সময় লাগে।
ট্রেনে: চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে পৌঁছে সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে কক্সবাজার যেতে পারেন। (চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন সেবা নির্মাণাধীন।)
কক্সবাজার পৌঁছানোর পর মেরিন ড্রাইভ রোডে যাওয়ার উপায়।
মেরিন ড্রাইভ সড়কটি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত, যা সমুদ্রতীর বরাবর চমৎকার দৃশ্য উপভোগের সুযোগ দেয়।
প্রাইভেট গাড়ি/সিএনজি: কক্সবাজার শহর থেকে প্রাইভেট গাড়ি বা সিএনজি ভাড়া করে সহজেই মেরিন ড্রাইভে পৌঁছানো যায়।
লোকাল ট্রান্সপোর্ট: মাইক্রোবাস বা শেয়ার করা গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন।
স্কুটার/বাইক: চাইলে পর্যটকদের জন্য স্কুটার বা বাইক ভাড়ার সুবিধা রয়েছে।
One thought on “কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভে সবচেয়ে কম খরচে মাত্র ২০০ টাকায় থাকার উপায়।”