কমলদহ ঝর্ণা ও ট্রেইল: সীতাকুন্ডের প্রকৃতির অপরূপ রূপ

কমলদহ ঝর্ণা ও ট্রেইল

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডকে বলা হয় ‘ঝর্ণা উপত্যকা’  আর এখানকার সবচেয়ে সুন্দর ও সহজ ট্রেইলগুলোর মধ্যে কমলদহ ঝর্ণা অন্যতম। বর্ষার রূপালি জলধারায় সেজে ওঠা এই ট্রেইল অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ও প্রকৃতিপিপাসুদের হৃদয় কেড়েছে। চলুন ঘুরে আসি এই অপরূপ স্থানটিতে!

❖ যাওয়ার পথ:

  • ঢাকা থেকে: সায়েদাবাদ, আরামবাগ বা ফকিরাপুল থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে চড়ে নামুন ‘বড় দারোগাহাট বাজার’। ভাড়া ৪০০–১,০০০ টাকা (বাসের মানভেদে), সময় ৪.৫–৫ ঘণ্টা।
  • ট্রেনে: কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনে ফেনী নেমে, সেখান থেকে মহিপাল হয়ে বাসে বড় দারোগাহাট। ট্রেন ভাড়া ২০০–৬০০ টাকা।
  • চট্টগ্রাম থেকে: অলংকার মোড় থেকে বাসে বড় দারোগাহাট, ভাড়া ৬০–৮০ টাকা ।

❖ ট্রেইল অভিজ্ঞতা:

বড় দারোগাহাট বাজারে নেমে ঢাকার দিকে মহাসড়ক ধরে কিছুটা হাঁটতে থাকুন। একটি ইটভাটা পেরিয়ে ডান দিকের মাটির রাস্তায় প্রবেশ করুন। ২০ মিনিট হাঁটলে পাবেন ঝিরিপথ – এখান থেকেই শুরু হয় কমলদহ ট্রেইলের মূল যাত্রা ।

  • প্রথম ধাপ: ৩ ধাপবিশিষ্ট ঝর্ণার শুধু প্রথম ধাপটি নিচ থেকে দেখা যায়। বাকি দুটি দেখতে ঝর্ণা বেয়ে উপরে উঠতে হবে।
  • শাখাপথ: উপরে উঠে ঝিরিপথ দুই ভাগে বিভক্ত –
    • বামে: ছাগলকান্দা ঝর্ণা (স্থানীয় নাম রূপসী ঝর্ণা)।
    • ডানে: ১২০–১৪০ ফুট উঁচু ৩ ধাপের অজানা ঝর্ণা ।
  • সময়: সবগুলো ঝর্ণা দেখতে ৪–৫ ঘণ্টা লাগবে। ট্রেইল তুলনামূলক সহজ হলেও পিচ্ছিল পাথরে সতর্ক থাকুন ।

কেন যাবেন কমলদহ?

কমলদহ ট্রেইল মোটামুটি সহজ, তাই নতুন ট্রেকারদের জন্যও উপযোগী। পুরো ট্রেইল কভার করতে ৪-৫ ঘণ্টা লাগে। বর্ষাকালে ঝর্ণার জল প্রবল হয়, তবে শরৎ বা শীতে (সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি) গেলে পথ পিচ্ছিল কম থাকে। আমরা বড় দারোগারহাট থেকে শুকনো খাবার আর পানি নিয়েছিলাম। ট্রেকিং জুতা আর বাঁশের লাঠি পথে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। থাকার জন্য সীতাকুন্ড বা চট্টগ্রামে হোটেল আছে, তবে দিনের ট্রিপে ফিরে আসা যায়।

কমলদহ শুধু ঝর্ণা নয়, প্রকৃতির সঙ্গে এক হওয়ার জায়গা। শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে পাহাড় আর ঝিরির মাঝে নিজেকে হারাতে চাইলে এটি আদর্শ। তবে, পরিবেশ রক্ষায় সচেতন থাকুন কোনো আবর্জনা ফেলবেন না। কমলদহ আমাকে শিখিয়েছে, প্রকৃতির কাছে সময় কাটালে জীবনের ছোট ছোট কষ্ট ভুলে যাওয়া যায়।

❖ থাকা-খাওয়া:

  • থাকা: বড় দারোগাহাটে থাকার ভালো হোটেল নেই। নিকটবর্তী সীতাকুণ্ড পৌরসভায় হোটেল বেছে নিন ।
  • খাওয়া: ট্রেইলে কোনো দোকান নেই। বাজারে শুকনো খাবার কিনে নিন। ফেরার পর সীতাকুণ্ডের খেতে পারেন।

❖ জরুরি টিপস:

  1. সেরা সময়: জুন–সেপ্টেম্বর (বর্ষা)। শুষ্ক মৌসুমে পানি কম থাকে ।
  2. সতর্কতা: পিচ্ছিল পথে হাইকিং শু বা গ্রিপওয়ালা জুতা পরুন। গ্রুপে যাওয়া নিরাপদ।
  3. গাইড: ঝিরিপথের শুরুতে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে নিন (২০০–৫০০ টাকা) ।
  4. দায়িত্বশীল পর্যটন: কোনো ময়লা না ফেলে ‘ক্যারি ইন, ক্যারি আউট’ নীতি মেনে চলুন ।

❖ আশেপাশের দর্শনীয় স্থান:

  • খৈয়াছড়া ও নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা (১০ কিমি)।
  • গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত।
  • সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা।

শেষ কথা:

প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে একদিন কাটাতে কমলদহের মতো জায়গা বিরল। ঝিরিপথের শীতল স্পর্শ, পাহাড়ের সবুজ আভা, আর ঝর্ণার অনবদ্য সুর আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে। শুধু মনে রাখুন – ‘প্রকৃতি আমাদের দেয় অমূল্য উপহার, এর সৌন্দর্য রক্ষা আমাদেরই দায়িত্ব’। বর্ষায় কমলদহের রূপ দেখতে ভুলবেন না, কিন্তু বৃষ্টির পরে পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা থাকলে ট্রেইল এড়িয়ে চলুন ।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these