চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পাহাড় আর বনের মাঝে হরিণমারা ঝর্ণা আর বাওয়াছড়া লেক যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলন। ঝর্ণার কলধ্বনি আর লেকের নীল জলের শান্তি মন জয় করে। আজ আমার ব্লগে সেই রোমাঞ্চকর গল্প শেয়ার করছি।
কোথায় অবস্থিত?
হরিণমারা ঝর্ণা ও বাওয়াছড়া লেক মিরসরাই উপজেলার ছোট কমলদহ বাজারের কাছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব দিকে। বাওয়াছড়া লেক (নীলাম্বর লেক নামেও পরিচিত) ওয়াহেদপুর গ্রামের বারমাসি ছড়ায় অবস্থিত। ঝর্ণাটি পাহাড়ের মাঝে, এবং লেকটি ট্রেইলের শুরুতে। ঝর্ণাটি বারমাসি ছড়া নামক একটি ছোট পাহাড়ি ছড়া থেকে উৎপন্ন, যা শেষমেশ গিয়ে বাওয়াছড়া লেকের সঙ্গে মিলিত হয়। এই এলাকা স্থানীয়ভাবে “বাওয়াছড়া ট্রেইল” নামে পরিচিত।
কীভাবে যাবেন?
চট্টগ্রাম থেকে:
অলংকার/একে খান মোড় থেকে ফেনীগামী বাসে ছোট কমলদহ বাজার। ভাড়া ৫০-৮০ টাকা, সময় ৪০-৪৫ মিনিট।
জিপিএস: 22°42’19.36″N, 91°36’46.03″E।
ঢাকা থেকে:
সায়েদাবাদ/ফকিরাপুল থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে (শ্যামলী, স্টার লাইন)। ভাড়া ৩০০-১,০০০ টাকা (নন-এসি/এসি)।
ট্রেনে ফেনী নেমে, সেখান থেকে বাসে ছোট কমলদহ (ভাড়া ৫০ টাকা)।
স্থানীয় রুট:
বাজারে নেমে পূর্ব দিকে ১৫ মিনিট হাঁটলে রেললাইন পার হয়ে নীলাম্বর লেক।
ট্রেকিং অভিজ্ঞতা: তিন ঝর্ণার রোমাঞ্চ
হরিণমারা ট্রেইল মিরসরাইয়ের সবচেয়ে সহজ ট্রেইল হিসাবে পরিচিত। মূল ট্রেইলে প্রবেশ করতেই সবুজ বন, পাখির ডাক আর ঝিরি পথের শীতল স্পর্শ মন কেড়ে নেয়। বাওয়াছড়া ট্রেইল একটি তুলনামূলকভাবে সহজ ট্রেইল প্রায় ৪৫-৫৫ মিনিট হাঁটলেই হরিণমারা ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়। ট্রেইলের শুরুতেই বাওয়াছড়া লেকের প্রশান্ত জলরাশি চোখ জুড়িয়ে দেয়। এরপরে ট্রেইল ভাগ হয়ে যায়
গোসলের মজা: হরিণমারা ঝর্ণার কুণ্ডে সাঁতরানোর সময় পানির ধারাগুলো পিঠে পাথরের মতো আঘাত করছিল – প্রাণজুড়ানো সেই অনুভূতি!
নীলাম্বর লেক: টলটলে পানিতে পাহাড়ের প্রতিফলন। ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ ।
ঝিরিপথ: লেক পার হয়ে Y-জংশনে ঝিরি দুইভাগে বিভক্ত:
বামে: হরিণমারা ঝর্ণা (১০ মিনিট)। নামকরণের ইতিহাস: একসময় হরিণ শিকার হতো এখানে।
ডানে: হাঁটুভাঙ্গা ঝর্ণা (৫ মিনিট) ও সর্পপ্রপাত (১০ মিনিট)।



যাওয়ার উপযুক্ত সময়
বর্ষা (জুন-সেপ্টেম্বর): ঝর্ণার পূর্ণ যৌবন, লেকের জল থৈথৈ। তবে পথ পিচ্ছিল।
শরৎ/শীত (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি): নিরাপদ ট্রেকিং, ঝিরিতে পানি কম।
কয়েকটি টিপস
- প্রস্তুতি: ট্রেকিং জুতা, বাঁশের লাঠি , পানি, শুকনো খাবার, সানস্ক্রিন, মশা তাড়ানোর ক্রিম নিন।
- গাইড: স্থানীয় গাইড পথ চেনায় আর গল্পে মজা যোগায়।
- পরিবেশ: আবর্জনা ফেলবেন না, প্রকৃতি রক্ষা করুন।
- খাবার: ছোট কমলদহ বাজারের ‘ড্রাইভার হোটেল’ এ মাছের ঝোল-ভাত।
- থাকার জায়গা: দিনের ট্রিপে ফিরে আসুন, বা চট্টগ্রামে হোটেলে থাকুন।
বাওয়াছড়া লেক আর হরিণমারা ঝর্ণা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জায়গা। শহরের কোলাহল ছেড়ে এই শান্তিতে নিজেকে হারাতে চাইলে এটি আদর্শ। তুমি কবে যাচ্ছ? তোমার গল্প শোনাও!
শেষ কথা: প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিন
বাওয়াছড়া লেকের নীল জলরাশি আর হরিণমারা ঝর্ণার অবাধ বিচরণ – এই দুয়ের মিলন শহুরে জীবনের সব ক্লান্তি মুছে দেয়। আমার মতো আপনিও যদি প্রকৃতির কোলে একদিনের পালান , এটাই সেরা গন্তব্য। শুধু মনে রাখবেন: “আমরা প্রকৃতির অতিথি, এর সৌন্দর্য রক্ষা আমাদের দায়িত্ব” ।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- ঝরঝরি ঝর্ণা (পন্থিছিলা)
- খৈয়াছড়া ঝর্ণা (বড়তাকিয়া বাজার)
- গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
- চন্দ্রনাথ পাহাড়